ইতিহাসের পাতা থেকে....
![]() |
সেই বিখ্যাত বাবরি মসজিদ |
বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারতের কিছু অংশ দখল করেন। কিন্তু তাই বলে তাকে মোগল সাম্রাজ্যের স্খাপক বলা যায় না। কারণ কোনো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে কেবল বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ দখল করলে হয় না, সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে হয় প্রশাসন। কিন্তু শাসনসংক্রান্ত সংগঠন গড়ে তোলার আগেই বাবর মারা যান। বাবরি মসজিদ বাবর নির্মাণ করেননি। বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন বাবরের সাথে আগত মীর বাকী নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। বাবরি মসজিদের মধ্যে প্রাপ্ত প্রস্তরফলক থেকে জানা যায়, মীর বাকী মসজিদটি স্খাপন করেন ৯৩৫ হিজরিতে, খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে যা দাঁড়ায় ১৫২৮। বাবরি মসজিদ একটি মামুলি মসজিদ মাত্র; যা কোনো উন্নত স্খাপত্যের নিদর্শন নয়। বাবর উত্তর ভারতে আসার আগেই উত্তর ভারতে মুসলিম স্খাপত্যের বিশেষ রীতি গড়ে উঠেছিল। তা গড়ে উঠেছিল মিনার, গম্বুজ ও প্রকৃত খিলানকে নির্ভর করে। কেবল উত্তর ভারতে নয়, দক্ষিণ ভারতে বাহমনি সুলতানদের নেতৃত্বেও গড়ে ওঠে একটা বিশিষ্ট মুসলিম স্খাপত্য রীতি। বাবরি মসজিদের নাম বিশেষভাবে আলোচনায় আসতে পেরেছে। তাই এই মসজিদকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সঙ্ঘাতের কারণ ঘটছে।
হিন্দুদের বিশ্বাস, ‘অযোধ্যাই ছিল রাজা রামের রাজত্বের রাজধানী। রাম কেবল রাজা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিষ্ণুর অবতার। রামের মৃত্যুর পর অযোধ্যায় স্খাপিত হয় রাম মন্দির। মীর বাকী এই রাম মন্দির ভেঙে সেখানে নির্মাণ করেন বাবরের নামে বাবরি মসজিদ।’ রামায়ণ ভারতের বিখ্যাত একটি কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে বলা হয়েছে, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি। কিন্তু রামায়ণের বর্ণনা অনুসরণ করে এ পর্যন্ত অযোধ্যায় কোনো প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়নি; যেমন আবিষ্কৃত হতে পেরেছে গ্রিক কবি হোমারের ইলিয়াড কাব্যগ্রন্থের বর্ণনা অনুসরণ করে ট্রয় নগরীর ধ্বংসাবশেষ। ইলিয়াডের রচনাকাল ধরা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ অব্দের কাছাকাছি। ইলিয়াডের ঘটনার সাথে রামায়ণের ঘটনার কিছু কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এটা প্রাচীন গ্রিকদের প্রভাবের ফল কি না বলা যায় না। রামায়ণে পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কার বর্ণনা। শ্রীলঙ্কার রাজা রাবণ রামের স্ত্রী সীতাকে চুরি করে নিয়ে যান। ফলে বাধে রাম-রাবণের যুদ্ধ। রামায়ণে রাবণের রাজধানী কনকলঙ্কার বিশেষ প্রশংসাপূর্ণ বর্ণনা আছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাতেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়নি। হোমারের বর্ণনা অনুসরণ করে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হতে পেরেছে তুরস্কে। কিন্তু রামায়ণের বর্ণনা অনুসরণ করে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার এখনো সম্ভব হয়নি। তাই বলা যায় না, যেখানে বাবরি মসজিদ অবস্খিত, এক সময় সেখানে ছিল রাম মন্দির। হতে পারে রামায়ণের কাহিনীর উদ্ভব ভারতে হয়নি, এই কাহিনীর কাঠামো এসেছে বাইরে থেকে। তবে বিষয়টি গবেষক মহলে হয়ে আছে বিতর্কমূলক। কিন্তু এহলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয়ার সময় বলেছেন, হিন্দুরা যেহেতু বিশ্বাস করে, রামের জন্মভুমি অযোধ্যা। তাই তাদের সেই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে হবে। আর ছেড়ে দিতে হবে বাবরি মসজিদের ওয়াক্ফর তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা।’ বিষয়টি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। কারণ এহলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় প্রদান করেছেন হিন্দু বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে, আইন ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়।
![]() |
উগ্রপন্থি হিন্দুরা ধ্বংস করছে বাবরি মসজিদ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন